• E-paper
  • English Version
  • বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:১৫ অপরাহ্ন

×

আ’লীগ নিষিদ্ধের সুযোগ নেই, সেই ইচ্ছাও এ সরকারের নেই- অ্যাটর্নি জেনারেল

  • প্রকাশিত সময় : মঙ্গলবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৪
  • ১৫৬ পড়েছেন

★ আগামী ১ সেপ্টেম্বর আদেশের দিন ধার্য

★ আওয়ামী লীগ প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী দল

★ এ দলে লাখ লাখ নেতাকর্মী দলের মতাদর্শ ধারণ করেন

 

মোঃ জিলহাজ হাওলাদারঃ

কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্র-জনতাকে ‘নির্বিচারে হত্যার’ অভিযোগে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল ও দল নিষিদ্ধ চেয়ে করা রিটের শুনানি শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব-উল ইসলামের হাই কোর্ট বেঞ্চে এ রিটের শুনানিতে জরিমানাসহ খারিজ চেয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। এসময় দল নিষিদ্ধের সুযোগ নেই এবং সেই ইচ্ছাও এ সরকারের নেই বলে জানান তিনি। প্রাথমিক শুনানি শেষে রিটকারীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে আগামী পহেলা সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট আদেশ দেবেন বলে দিন ধার্য করা হয়েছে। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি মাহবুব উল ইসলামের নেতৃত্বে দ্বৈত বেঞ্চ এ দিন নির্ধারণ করেন।

রিট শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বেশ কয়েকটি যুক্তি তুলে ধরে রিটটি চলতে পারে না বলে মত দেন। তিনি বলেন, রিটে চাওয়া হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার তিন বছর থাকুক। কিন্তু আদালত নির্ধারণ করতে পারেন না যে, অন্তর্বর্তী সরকার কতদিন থাকবে৷ আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ব্যক্তির অপরাধের দায় সংগঠন নিতে পারে না। সেক্ষেত্রে তাদের বিচার আইন অনুযায়ী হবে। ‘নিবন্ধন নিষিদ্ধ সংবিধান পরিপন্থি। একটি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল করতে পারে। তাছাড়া, আওয়ামী লীগ প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী দল। এ দলে অনেক ভালো নেতাকর্মীও রয়েছেন, তারা দলের মতাদর্শ ধারণ করেন। এজন্য দল নিষিদ্ধ করার সুযোগ নেই। শুনানিতে আসাদুজ্জামান আরও বলেন, সংবিধান সমুন্নত রাখতে চায় সরকার। কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার ইচ্ছে সরকারের নেই।” এর আগে গত ১৯ আগস্ট মানবাধিকার সংগঠন সারডা সোসাইটির পক্ষে নির্বাহী পরিচালক মুরাদ ভূঁইয়া এ রিটটি করেন। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ও দলটির নিবন্ধন বাতিল ছাড়াও ওই রিটে, যে সব প্রতিষ্ঠান শেখ হাসিনার নামে রয়েছে, সেগুলোর নাম পরিবর্তনও চাওয়া হয়েছে। একই রিটে দেশ সংস্কারের লক্ষ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ সর্বনিম্ন তিন বছর চাওয়া হয়।

সেই সাথে বিদেশে পাচার করা টাকা ফেরত আনতে এবং বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া সব কর্মকর্তাদের বদলি চাওয়া হয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত পাঁচ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন শেখ হাসিনা। এরপর দেশের বিভিন্ন জায়গায় হত্যা, অপহরণ. মানবতাবিরোধী অপরাধসহ নানা অভিযোগে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হচ্ছে। এর আগে গত রোববার আরিফুর রহমান মুরাদ ভূঁইয়া নিজে আবেদনের শুনানি করেন। তখন জ্যেষ্ঠ বিচারক তাকে একজন আইনজীবী নিয়োগ করার পরামর্শ দেন, যাতে ভালোভাবে শুনানি করা যায়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার শুনানির দিন ধার্য করেন। গতকাল সকালে প্রথমে শুনানি করতে উঠে মুরাদ ভূঁইয়া বলেন, তার আইনজীবী অন্য কোর্টে আছেন, সময় (পাস ওভার) চান। তখন আদালত সাড়ে ১২টায় শুনানির সময় ঠিক করে দেয়। এরপর বেলা সাড়ে ১২টায় শুনানি করতে উঠে মুরাদ ভূঁইয়া আদালতকে বলেন, “আমি একজন আইনজীবী নিয়োগ করেছি; তবে তিনি (আইনজীবী) বলেছেন যেন আমি শুনানি করি; সমস্যা হলে তিনি আসবেন। তিনি এখানে আছেন।” এ সময় মুরাদ ভূঁইয়া পেছনে তাকিয়ে আইনজীবীকে দেখার চেষ্টা করেন। তখন জ্যেষ্ঠ বিচারক তাকে বলেন যেন আইনজীবীকে খুঁজে আনেন, তিনি সময় দেবেন। তখন মুরাদ ভূঁইয়া বাইরে গিয়ে আইনজীবীকে খুঁজে আসেন এবং না পাওয়ার কথা জানান আদালতকে। তখন অ্যাটর্নি জেনারেল উঠে মো. আসাদুজ্জামান আদালতকে বলেন, “আবেদনকারী যথেষ্ট ‘কম্পিটেন্ট’, তিনি শুনানি করতে পারবেন।” এরপর মুরাদ ভূঁইয়া শুনানি করেন। তারপর শুনানিতে অংশ নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত নেই রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের। সংবিধানে রাজনৈতিক দল পরিচালনার যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে তা খর্ব করবে না সরকার। বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকারের অনেক অন্যায়-অবিচারের শিকার হয়েছে মানুষ। অনেক গুম-খুন হয়েছে। সেগুলোর বিচারের জন্য আইন ও আদালত রয়েছে। আইনি ধারায় ব্যাক্তি অপরাধের বিচার হবে। তবে আওয়ামী লীগের অনেক ভালো নেতাকর্মীও রয়েছেন, তারা দলের মতাদর্শ ধারণ করেন। এজন্য দল নিষিদ্ধ করার সুযোগ নেই। তাদের রাজনৈতিক অধিকার খর্ব করার ইচ্ছা এ সরকারের নেই।” তিনি বলেন, “যিনি রিট করেছেন তার রিট করার এখতিয়ার নেই। রিটে আওয়ামী লীগকে বিবাদী করা হয়নি। ‘সারডা’ নামের সংগঠন যে রিট করেছে তার গঠনতন্ত্রও এ ধরনের রিট করার অনুমোদন দেয় না।” অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, “অতীতে অনেক রাজনৈতিক বিষয়কে কোর্টে টেনে আনা হয়েছে, যার মূল্য আমাদেরকে দিতে হয়েছে। যে গণঅভ্যুত্থানটি হয়েছে তা বিচার বিভাগের ওপরেও এসেছে। কোর্টে কোনো ঘটনা হলে আইনজীবী হিসেবে আমার ভেতরে রক্তক্ষরণ হয়। এজন্য মাঠের রাজনীতি মাঠেই থাকুক। এ রিট সরাসরি খারিজ করে আবেদনকারীর ওপর কস্ট (খরচ) আরোপ করা হোক’ বলে দাবী করেন রাষ্ট্রপক্ষের অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

উল্লেখ্য, এ রিটে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের জন বিভাগের সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, আইন সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিব, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বিএফআইইউ প্রধান এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়কদের বিবাদী করা হয়েছে।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA